মিরসরাইয়ের দর্শনীয় স্থান এই শীতে ঘুরে আসতে পারেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপূর্ব স্বর্গরাজ্য চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট। সমুদ্র সৈকত, হ্রদ, ঝর্ণা, পাহাড় ও গিরিখাত থাকায় এ উপজেলা পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। সেখানে রয়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ মহামায়া।
এছাড়াও রয়েছে দেশের ৬ষ্ঠ সেচ প্রকল্প, মুহুরী প্রকল্প, উপজেলার আলীনগরে অবস্থিত হিলসডেল মাল্টি ফার্ম ও মধুরিমা রিসোর্ট, করেরহাট ফরেস্ট ডাক বাংলো, ডোমখালী সমুদ্র সৈকত, মিরসরাই শিল্পনগর সমুদ্র সৈকত, রূপসী ঝর্ণা, বাওয়াচড়া লেক ও হরিণাকুণ্ড ঝর্ণা, রূপসী ঝর্ণা, সোনারহাট। ঝর্ণা, সোনাইছড়া ঝর্ণা, নাপিত্তাছড়া। ঝর্ণা, বোয়ালিয়া ঝর্ণা, খৈয়াছড়া ঝর্ণা ও মেলখুম পাস।
কোথায় মিরসরাইয়ের দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করবেন?
শিল্পনগর সৈকত
মিরসরাইয়ের দর্শনীয় স্থান প্রথমে শিল্পনগরীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখার পর এখন সবাই ছুটছেন সমুদ্রের ধারে নির্মিত সুপার ডাইকে। ডাইকের পাশেই সমুদ্র সৈকত। জোয়ারের খেলায় সুন্দর হয়ে ওঠে এই সৈকত। বৃষ্টির সময় সুপার ডাইক পর্যন্ত পানিতে টইটম্বুর থাকে।
দেখা গেছে, ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ শুরু হয়। এরপর বঙ্গোপসাগরের ধারে নির্মিত হয় সুপার ডাইক। সুরক্ষার জন্য ডাইকে হাজার হাজার ব্লক রাখা হয়েছে। মূলত এর পরেই সমুদ্র সৈকতের সন্ধান পাওয়া যায়। বিশেষ করে বসুন্ধরা পয়েন্টে পর্যটকদের ভিড় বেশি দেখা যায়। গত তিন বছর ধরে হাজার হাজার পর্যটক সেখানে বেড়াতে আসছেন।
মিরসরাইয়ের দর্শনীয় স্থান ডোমখালী সৈকত
বছরের শেষ দিকে ডোমখালী সমুদ্র সৈকতে পর্যটকদের ভিড় থাকে। এখানে প্রতিদিন দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকরা আসছেন। বিকেল হতেই মানুষের ভিড় বাড়তে থাকে। বিশেষ করে শুক্র ও শনিবার পর্যটকদের ভিড় বাড়ে। তবে সুপার ডাইক নির্মাণের জন্য যাতায়াতের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছে।
সাহেরখালী ইউনিয়নের ডোমখালী থেকে গজারিয়া পর্যন্ত চর ও বঙ্গোপসাগরের মোহনার বিশাল এলাকা এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে দৃশ্যমান সমুদ্রতীরে মানুষের আনাগোনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, পশ্চিম দিকে তাকালে শুধু সাগর আর সাগর দেখতে পাবেন। ঘাটে সারি সারি ক্যানো। জেলেদের কেউ সাগর থেকে মাছ ধরে ঘাটে ফিরছেন, কেউ আবার সাগরে যাচ্ছেন। কেউ পর্যটকদের নিয়ে নৌকা ভ্রমণে ছুটছেন।
খৈয়াছড়া জলপ্রপাতের অপরূপ সৌন্দর্য
প্রকৃতির নান্দনিক ক্যানভাসে আঁকা সৌন্দর্যে মুগ্ধ দেশের মানুষ। রাতে চাঁদের আলোয় ঝরনার অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করছেন অনেকে।
প্রকৃতির অপরূপ সৃষ্টি সেতুবন্ধন করছে, সবুজের চাদরে ঢাকা বনানীর রূপের আগুন ঢেলে দিচ্ছে, যেখানে প্রকৃতি তার মন নিয়ে খেলা করছে, সেখানে মানুষ ঝর্ণার শব্দে নিজেকে ভিজিয়ে যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি থেকে নিজেকে ধুয়ে নিচ্ছে। বসন্ত
গ্রামের সবুজে আঁকা আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে শরীরটা একটু ভিজিয়ে দেওয়া যায়, সন্দেহ নেই। আটতলা ঝরনা দেখতে ভিড় জমান দেশি এবং বিদেশি পর্যটকরা। দেশের অন্যতম বড় প্রাকৃতিক ঝর্ণা দেখতে প্রতিদিন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক আসেন।
উপজেলার খৈয়াচড়া ইউনিয়নের বড়তাকিয়া বাজারের উত্তর পাশে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে ৪.২ কিলোমিটার পূর্বে ঝর্ণার অবস্থান। এর মধ্যে ১ কিলোমিটার গাড়ি চালিয়ে বাকি পথ হেঁটে যেতে হবে।
দুপাশে উঁচু পাহাড়। উঁচু পাহাড় থেকে ক্রমাগত প্রচন্ড শব্দে ঠাণ্ডা পানি বইছে।
যে কেউ প্রথমবারের মতো সুন্দর জলপ্রপাতটি দেখবে তার চেহারা দেখে পাগল হয়ে যাবে। মেঘের মতো উড়তে থাকা সাদা জলকে আলতো করে ছুঁয়ে দিলে তার শীতল হাওয়া আপনার ক্লান্তি ভুলে যাবে মুহূর্তের মধ্যে। স্থির জলের শান্ত প্রবাহ আপনাকে বলবে যে এর উত্স অবশ্যই বিশাল কিছু থেকে হতে পারে। কিছুক্ষণের মধ্যে, পর্যটকরা লাল এবং নীল ফড়িংয়ের মিছিল আবিষ্কার করবে!
তাদের সুরেলা কিচিরমিচির শব্দ যতদূর যায় ততদূর পর্যন্ত শোনা যায়। পথে হরিণের ডাক শোনা যায়। অচেনা পাখির ডাক, উপত্যকা জুড়ে ঘাসের গালিচা। সুন্দর ঝরনার পানিতে গোসল করার তাগিদ কেউই প্রতিরোধ করতে পারে না।
বছরের পর বছর ঝরনার পানি বয়ে যাচ্ছে এই স্রোতে। কয়েক বছর আগে এটি রূপসী ঝর্ণা নামে আবিষ্কৃত হয়। মিরসরাই উপজেলার সর্বদক্ষিণে বড় দারোগারহাটের উত্তরে পাহাড়ে একটি সুন্দর জলপ্রপাত অবস্থিত।
মিরসরাইয়ের অন্যান্য ঝরনার তুলনায় এই ঝর্ণায় প্রবেশ অনেক সহজ। খৈয়াছড়া বা নাপিত্তাছড়া জলপ্রপাতের চেয়ে কোনো অংশই কম সুন্দর নয়। এই জলপ্রপাতের পথে অপরূপ দৃশ্য, দুপাশে খাড়া পাহাড়, সবুজ প্রকৃতি, গুহার মতো ঢাল, তিনটি ভিন্ন সুন্দর জলপ্রপাত রূপসীর সৌন্দর্যকে অন্য জলপ্রপাত থেকে আলাদা করে।
মুহুরী চারণভূমিতে জল আর সূর্যের খেলা
প্রকৃতির অপর নাম মুহুরী। যেখানে চলছে আলো-আঁধারের খেলা। জীবনের নানা ছবি আছে। মুহুরীর চর যেন মিরসরাইয়ের আরেক মিরসরাই। অন্তহীন পশুখাদ্যে ছোট প্রকল্প। ওপারে মিরসরাই, ওপারে সোনাগাজী। 40 দূর থেকে দরজার নিয়ন্ত্রকের আওয়াজ শোনা যায়।
পশ্চিমে মাছ ধরার খেলা, এবং পূর্বে মন-ফুরা প্রকৃতি। নিমগ্ন মনোবল জেগে উঠবে পূর্বে জাগ্রত চারণভূমিতে। একটি ডোবায় কিছুদূর যাওয়ার পর একটি সাদা বক দেখা যাবে। এখানে বিদেশি পাখির ঝাঁক। অতিথি পাখি হিসেবে এরা সুপরিচিত। চকচকে বালির ওপর জল আর সূর্যের খেলা চলে সারাক্ষণ। সামনে এবং পিছনে, বাম এবং ডান, শুধুমাত্র সৌন্দর্য এবং সৌন্দর্য।
এমতাবস্থায় মন অন্ধকারে ঢেকে যেতে পারে, ক্যামেরা সঙ্গে না থাকলে। মুহুরীর প্রকৃতির স্পর্শে জেগে ওঠা স্মৃতিগুলো হারিয়ে যাওয়ার নয়। হাজার হাজার বছর ধরে, এই ক্যামেরাগুলি ফিল্মে বন্দী করা হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক (পুরাতন) জোরারগঞ্জ বাজারে নেমে সংযোগ সড়ক ধরতে হবে।
জোরারগঞ্জ-মুহুরী প্রজেক্ট রোড নামের এ সড়কে বিভিন্ন ধরনের মোটরযান চলাচল করতে দেখা যাবে। মোটামুটি আট কিলোমিটার ভাঙা-বাঁকা আধা-পাকা রাস্তা। তারপর মুহুরী প্রকল্প বাঁধ। দুই কিলোমিটার পরই দেখা মিলবে আসল সৌন্দর্য।
বোয়ালিয়া জলপ্রপাত
বোয়ালিয়া জলপ্রপাত মিরসরাইয়ের পাহাড়ি ঝর্ণাগুলোর একটি। আপনি একদিনেই এই সুন্দর জলপ্রপাতটি দেখতে পারেন। আপনি আপনার ব্যস্ত জীবন থেকে বিরতি নিতে পারেন এবং যে কোন সময় পরিদর্শন করতে পারেন। চারদিকে সবুজ পাহাড় আর পাহাড়। এই বন্য জলপ্রপাতটি সবুজের সৌন্দর্য, বিস্তীর্ণ পাহাড় ও বনভূমিতে ঘেরা। এখানে প্রকৃতির অপ্রতিরোধ্য সৌন্দর্যে বিমোহিত হতে হয়।
প্রকৃতির স্নিগ্ধতায় সিক্ত এখানকার জনজীবন যেমন সৌহার্দ্যপূর্ণ তেমনি প্রকৃতির করুণায় পরিপূর্ণ। জানা গেছে, মিরসরাইয়ে অনিন্দ্যসুন্দা উথান ঢল নামে অন্তত ৫টি ছোট-বড় শাখা ঝর্ণা ও একটি পাথুরে ঢাল রয়েছে। তাই বর্ষা মৌসুমে পর্যটকরা ঘরে বসে না থেকে ক্ষত ভিজানোর জন্য বোয়ালিয়া ঝর্ণায় ছুটছেন।
এই ট্রেইলে মূল জলপ্রপাতে যাওয়া অন্যান্য জলপ্রপাতের তুলনায় অনেক সহজ। বোয়ালিয়া জলপ্রপাতের বিশেষত্ব হল এর অদ্ভুত আকৃতি। এর আকৃতি ব্যাঙের ছাতার মতো এবং বোয়াল মাছের মাথার মতো, তাই সম্ভবত এই ঝর্ণার নাম বোয়ালিয়া।
থাকো আর খাও
বড়দারোগাহাট, বড়কমলদহ, কমলদহ, মিরসরাই সদর, মহামায়া এলাকায় খাওয়ার হোটেল আছে। দূর-দূরান্ত থেকে আগত পর্যটকদের থাকার জন্য মিরসরাইয়ের বিভিন্ন পর্যটন স্পট থেকে গাড়িতে করে মাত্র ৪০-৫০ মিনিট পর চট্টগ্রাম শহরের বিভিন্ন আবাসিক হোটেলে পৌঁছানো যায়।
Read More:-